মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও...

Tripoto
Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 1/14 by Deya Das
অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী সমৃদ্ধ দুর্গ (ছবি সংগৃহীত)

ভারতবর্ষের পশ্চিম মধ্য প্রদেশের মালওয়া অঞ্চলের ধর শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মান্ডু এক প্রাচীন জনপদের ধ্বংসাবশেষ, যা ভারতীয় সুলতানদের বর্ষাকালীন দুর্গ বিলাস হিসেবে পরিচিত। পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত এই দুর্গটি দেখলে মনে হয় এটি যেন সাক্ষাৎ এক মেঘদূত, যেখানে মেঘ জল ছাড়া অন্য কিছুর কথায় মাথায় আসবে না। অসামান্য স্থাপত্যশৈলীর এবং শিল্প নৈপুন্যতায় গড়ে ওঠা মান্ডু একসময় রাণী রূপমতীর রূপের জৌলুসে ঝলমল করে উঠল। কিন্তু সময়ের পদাঘাতে আকবরের অপ্রত্যাশিত চাহিদার দাবিতে রানি রূপমতী আত্মহত্যা করেন এবং সাথে বাজি বাহাদুর যুদ্ধে হেরে গিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। আর এরসাথেই মান্ডু পরিণত হয় এক অজানা পরিত্যক্ত দুর্গ নগরীতে।

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 2/14 by Deya Das
শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাস (ছবি সংগৃহীত)

বলা হয়,আজও এই পরিত্যক্ত দুর্গতিতে কান পাতলে শোনা যায় বাজ বাহাদুরের কবিতা, যা রানী রূপমতীর গলায় গান হয়ে ফুটে ওঠে এবং রাণী রূপমতীর নুপুরের শব্দ। বিন্ধ্য পর্বতের কোলে নর্মদা নদীকে সাক্ষী রেখে বর্ষাকালে মান্ডু বর্তমানেও তার ইতিহাস রচনা করে চলেছে।

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 3/14 by Deya Das
ইতিহাসের অলিন্দে (ছবি সংগৃহীত)

ইতিহাসের পাতায় মান্ডু-

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 4/14 by Deya Das
ছবি সংগৃহীত

দশম শতাব্দীতে রাজা ভোজ দুর্গনগরীর হিসাবে মান্ডুর পরিচিতি সবার সামনে তুলে ধরেন। তারপর ১৪০১ সালে মোহরা দিল্লি দখলের পর আফগানি সেনাপতি দিলবার খান মালিবাগ একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর দিলদার খানের পুত্র হোসাং খান মালবার রাজ্যের রাজধানী ধর থেকে মান্ডুকে স্থানান্তরিত করে তার সুবর্ণ যুগের সূচনা করেন। এই সময় মান্ডব অর্থ প্রতিপত্তি এবং ঐশ্বর্যে এক বিশাল খ্যাতি লাভ করে। হোসাং খানের পুত্র মহম্মদ মাত্র এক বছর রাজত্ব করার পর খিলজি চক্রান্তের বিষপান করে মৃত্যুবরণ করেন এবং তারপর মহম্মদ খিলজি প্রায় ৩৩ বছর রাজত্ব করেন। মোহাম্মদ খিলজির মৃত্যুর পর তার পুত্র সুলতান গিয়াসউদ্দিন খিলজি ১৩১ বছর রাজত্ব করেছিলেন।

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 5/14 by Deya Das
প্রাসাদ এবং দুর্গ ঘেরা শহর (ছবি সংগৃহীত)

এরপর ১৫২৬ সালে গুজরাটের বাহাদুর শাহ মান্ডু দখল করেন এবং পরবর্তীতে ১৫৩৪ সালে সম্রাট হুমায়ুন তা পুনঃরায় দখল করেন। এরপর নানা সংগ্রামের পর ১৫৫৪ সালে মান্ডুর শেষ স্বাধীন সুলতান বাজ বাহাদুর ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু ১৫৬১ সালে বাজ বাহাদুর সম্রাট আকবরের হাতে পরাজিত হলে ১৭৩২ সাল পর্যন্ত মান্ডু মোগল সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। ঠিক এরপরে মাধ্যমে তাদের অধীনে চলে আসে এবং মালবা রাজ্যের রাজধানী মান্ডু থেকে ধারে নিয়ে যায়। ফলে আস্তে আস্তে নগরীটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে শুরু করে।

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 6/14 by Deya Das

দর্শনীয় স্থান-

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 7/14 by Deya Das
দর্শনীয় স্থান নিঃসন্দেহে (ছবি সংগৃহীত)

প্রায় ৪৫ বর্গমাইল জায়গা জুড়ে বিস্তৃত মান্ডু দুর্গটিতে রয়েছে ১২টি প্রবেশদ্বার। এই প্রবেশদ্বার করেই বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন- দিল্লি দরওয়াজা, আলমগীর দরওয়াজা, ভাঙ্গি দরওয়াজা ইত্যাদি। বহু যুগ ধরে সুলতান সম্রাট এই মান্ডু দুর্গটিতে রাজত্ব করে গেছেন। তার ফলে এই দুর্গটি বহু ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 8/14 by Deya Das
শৈল্পিক নিপুণতা (ছবি সংগৃহীত)

নির্মাণশৈলীও স্থাপত্যকীর্তিতে পরিপূর্ণ এই দুর্গটিতে রয়েছে প্রায় ৭৫টি স্মৃতিসৌধ। শুধু তাই নয়, এই জায়গায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার মহিমা রয়েছে। পর্যটকদের দেখার সুবিধার জন্য এই মান দুর্গটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে; যথা- রেওয়াকুন্ড গ্রুপ, সেন্ট্রাল গ্রুপ এবং রয়াল এনক্লেভ।

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 9/14 by Deya Das
ছবি সংগৃহীত

আলমগীর, দিল্লি ও ভাঙ্গে দরওয়াজা, আশরাফী মহল, রাম মন্দির, দামাস্কাসের গ্রেট মস্কোর অনুকরণে তৈরি জামে মসজিদ এবং হোসাং শাহের সমাধি (ভারতের প্রথম মার্বেল পাথরের তৈরি সৌধ) সেন্ট্রাল গ্রুপের মধ্যে পড়ে। স্থাপত্য শিল্পের সূক্ষ্ম কারুকার্যর রহস্য উদঘাটনে সেই যুগের শাহজাহান তাজমহল নির্মানের আগে তার চার প্রধান স্থপতিকে পাঠিয়েছিলেন এটি দেখে পর্যবেক্ষণ করার জন্য। মান্ডু দুর্গটির সেরা স্থাপত্যকীর্তি হল জাহাজমহল,যা রয়েল গ্রুপের মধ্যে পড়ে।

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 10/14 by Deya Das
ছবি সংগৃহীত

সুলতান গিয়াসউদ্দিন খিলজির বর্ষার সঙ্গে সঙ্গত করে এই জাহাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। জাহাজ মহল এর মধ্যে রয়েছে দুটি জলাশয় যার নাম মঞ্জু তালাও এবং কাপুর তালাও । আর এই দুটি জলাশয় মাঝখানে অবস্থিত প্রায় ১২০ মিটার লম্বা দ্বিতল প্রাসাদের ছাদে দাঁড়িয়ে জলাশয়ের জলের দিকে তাকালে মনে হয় আপনি নিজে কোন জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এছাড়া রয়েছে হিন্দোলা মহল। এটি একটি দেওয়ানী দরবার। স্লিপিং দেওয়াল এবং পিলারের কারুকার্য দেখে হঠাৎ করে মনে হতেই পারে এই মহলটি দোদুল্যমান। তাই এই জায়গাটির নাম হিন্দোলা।

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 11/14 by Deya Das
ছবি সংগৃহীত

মান্ডুর দক্ষিণ প্রান্তে রেওয়া গ্রুপের মধ্যে বাজ বাহাদুরের প্রাসাদ, রাণী রূপমতীর প্যাভিলিয়ন দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে আজও প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বসে রয়েছে আর সৃষ্টি করে চলেছে প্রেমের মঙ্গলগাথা। এছাড়া নীলকন্ঠ প্রাসাদ ও মন্দির, আন্ধেরি ও উজালা বাউরী, দাই কে মহল, দাই কি ছোটি বেহেন কে মহল, সাগর তালাও, এক খাম্বা মহল, দারিয়া খান মাকবারা, হাতি মহল ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায়।

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 12/14 by Deya Das
ছবি সংগৃহীত

থাকবার জায়গা-

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 13/14 by Deya Das
ছবি সংগৃহীত

হোটেল মালওয়া রিসোর্ট - ০৭২৯২- ২৬৩২৩৫

হোটেল মালওয়া রিট্রিট - ০৭২৯২- ২৬৩২২১

হোটেল রূপবতী- ০৭২৯২- ২৬৩২৭০

হোটেল ভিরাসাত মান্ডু - +৯১৮৯৫৯৬৫৪৯৯৯

হোটেল ইয়াসিকী প্যালেস - +৯১৭৯৪৭৩৩৯৪৫১

পথনির্দেশ-

Photo of মান্ডুর স্থাপত্য-শৈলীর এবং ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হতে পারেন আপনিও... 14/14 by Deya Das
ছবি সংগৃহীত

মান্ডুর যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে ইন্দোর পৌঁছতে হবে। ইন্দোর থেকে মান্ডুর দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। বাস বা গাড়ি ভাড়া করে আপনি ইন্দোর থেকে পান্ডুর পৌঁছতে পারবেন।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।