বছরে দশ লক্ষ কচ্ছপের ঠিকানা : উড়িষ্যার ভিতরকণিকার ম্যানগ্রোভ অরণ্য

Tripoto

ভিতরকণিকা (ওড়িয়া ভাষায় কণিকা মানে অতুলনীয় সুন্দর) অরণ্যের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সুখ্যাতি বিশ্বনন্দিত। বিপন্ন অলিভ রিডলি প্রজাতির কচ্ছপদের আশ্রয়াঞ্চল হিসেবে ভিতরকণিকা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং সুপরিচিত এলাকা। এই অরণ্যের ভিতরে গহীরমঠ জাতীয় উদ্যানের ভিতর গহীরমঠ সমুদ্রতটে প্রতি বছর দশ লক্ষ অলভ রিডলি কচ্ছপ সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি ডিম পাড়ে।

ভিতরকণিকা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কোথায়

উড়িষ্যার পারাদ্বীপ এবং চাঁদিপুরের মধ্যে অবস্থিত অরণ্য এক অপার প্রাকৃতিক বিস্ময়, এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে খুঁজে পাবেন ৫৫ রকম প্রজাতির ম্যানগ্রোভ, ১৭০ রকম প্রজাতির পাখি এবং প্রচুর সংখ্যায় নোনা জলের কুমীর। সঙ্গে দেখতে পাবেন হকসবিল এবং লেদারব্যাক কচ্ছপ, বিবরণের সফ্ট শেল কচ্ছপ এবং ভয়ানক কিন্তু বিপন্ন কিং কোবরা এবং ভারতীয় রক পাইথন।

Photo of বছরে দশ লক্ষ কচ্ছপের ঠিকানা : উড়িষ্যার ভিতরকণিকার ম্যানগ্রোভ অরণ্য 1/2 by Aninda De
প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যের নিখুঁত পরিদর্শন (ছবি সংগৃহীত)

পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য হওয়া সত্ত্বেও ভিতরকণিকার সংরক্ষণ প্রচেষ্টা নিয়ে কিন্তু আমরা খুব একটা অবগত নই। একসময়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সল্ট ওয়াটার ক্রোকোডাইল বা নোনা জলের কুমীর পাওয়া যেত এই অঞ্চলেই। কিন্তু বিংশ শতকের শুরুর দিক থেকে পরিচালনার গাফিলতিতে এই অঞ্চলটির প্রভূত ক্ষতি হয়। জমিদারি প্রথার লুপ্তির পর ১৯৭৫ সালে সরকারের পক্ষ থেকে এই ভিতরকণিকা ম্যানগ্রোভ অঞ্চলটিকে জাতীয় অভয়ারণ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে এই অঞ্চলের উদ্ভিজ এবং প্রাণীজ সম্পদকে রক্ষা করতে আরও এলাকা সংযুক্ত করা হয়, এবং ১৯৯৮ সাল থেকে প্রায় ৬৭২ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল এই জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত।

প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণী প্রেমিকরা ভিতরকণিকাতে ব্রাহ্মণ, বৈতরণী এবং পাটশাল নদীর সঙ্গমস্থলে এসে উপস্থিত হন। উদ্দেশ্য এই অঞ্চলের সল্টওয়াটার ক্রোকোডাইল, বিরল প্রজাতির কচ্ছপ, চিতাবাঘ, শেয়াল, হায়েনা, শজারু, বনবিড়াল এবং সিন্ধুঘটকের দেখা পাওয়া। পক্ষীবিদদের কাছেও এই এলাকা প্রচন্ড গুরুত্বপূর্ণ - তাঁরা এখানে আসেন দেখতে নানা পরিযায়ী এবং স্থানীয় পাখীর প্রজাতিদের; যেমন - এশিয়ান ওপেনবিল, ৬ রকম প্রজাতির মাছরাঙা, ৫ রকম প্রজাতির ইগ্রেট, ব্ল্যাক-হেডেড ইবিস ইত্যাদি।

এন্ট্রি পয়েন্ট / প্রবেশ অঞ্চল

খোলা এবং গুপ্তি নামক দুই গ্রাম ভিতরকণিকা অরণ্যে প্রবেশের প্রধান দুই এন্ট্রি পয়েন্ট। উড়িষ্যার কোন দিক থেকে আপনি আসছেন তার ওপর নির্ভর করবে কোন গ্রাম দিয়ে অরণ্যে প্রবেশ করলে বেশি সুবিধে হবে। উভয় চেকপোস্ট থেকেই আপনি প্রবেশ পারমিট বা অনুমতিপত্র পেয়ে যাবেন। উভয় এন্ট্রিপয়েন্ট থেকেই আপনি অরণ্যের ভিতরে যাওয়ার বোট পেয়ে যাবেন।

Photo of বছরে দশ লক্ষ কচ্ছপের ঠিকানা : উড়িষ্যার ভিতরকণিকার ম্যানগ্রোভ অরণ্য 2/2 by Aninda De
দেখা পেতে পারেন বিভিন্ন জলজ প্রাণীর (ছবি সংগৃহীত)

কখন যাবেন

অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে এই অঞ্চলে অলিভ রিডলি কচ্ছপদের সমাগম হয়। তারা ডিম পেড়ে, মে মাস নাগাদ দক্ষিণে শ্রীলঙ্কার দিকে যাত্রা শুরু করে। প্রথম নেস্টিং হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। আর আরও বড় করে নেস্টিং দেখা যায় মার্চ ও এপ্রিল মাসে।

বার্ডওয়্যাচিং যদি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে জুনের প্রথমদিকে আপনি দেখতে পাবেন হিরণ দের আগমন। শীতকালে কিন্তু এই অঞ্চলে যথেষ্ট ঠান্ডা পড়ে, তাপমাত্রা থাকে ২৭ থেকে ১৫ ডিগ্রীর মধ্যে। গতমকালেও কিন্তু সন্ধে নামার পর জঙ্গলের শীত ভাব কাটাতে সঙ্গে একটা জ্যাকেট রেখে দেওয়া ভাল।

এপ্রিল থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ম্যানগ্রোভ অঞ্চলগুলোতে না যাওয়াই ভাল। এই সময়ে নানা রকম সাইক্লোন দেখা যায় এবং নদী ভয়ানকভাবে স্রোতস্বিনী হয়ে ওঠে।

কোথায় থাকবেন

স্যান্ড পেবেলস জঙ্গল রিসর্ট : দু'জন থাকার মতো সুইস টেন্টের ভাড়া ৫০০০ টাকা

ভিলেজ রিসর্ট : দু'জনের কটেজের জন্যে লাগবে ৪৫০০ টাকা

ফরেস্ট রেস্ট হাউসে বা পার্কের আশেপাশে থাকার আরও জায়গা পাওয়া যায়, বেশ কম দামেই। বুকিং করতে হলে যোগাযোগ করতে পারেন : ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার, রাজনগর (ফোন : ০৬৭২৯-৮৪৬০)

ভিতরকণিকা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে কী করে পৌঁছবেন

বিমানপথে : এখান থেকে ভুবনেশ্বরের বিমানবন্দরের দূরত্ব ১৯০ কিলোমিটার

রেলপথে : ভিতরকণিকা থেকে ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভদ্রাক স্টেশনটি রেলপথে সবথেকে নিকটবর্তী।

সড়কপথে : তবে সবথেকে সুবিধে হবে যদি ড্রাইভ করে ভুবনেশ্বর থেকে রাজনগর হয়ে ভিতরকণিকা আসেন। সময় লাগে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা।

ভিতরকণিকা হয়ে ভুবনেশ্বর যাওয়ার পথেই পড়বে নানা রকম দ্রষ্টব্যস্থান। তাই আপনার জন্যে রইলো ৪দিন ৩রাতের একটি ভিতরকণিকা সফরসূচি যা অনুসরণ করে আপনি সম্পূর্ণ এলাকাটি ধীরে সুস্থে ঘুরে দেখতে পারবেন।

প্রথম দিন

রত্নগিরি

ভুবনেশ্বর পৌঁছে একটি ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসুন রতনাগিরি। যদি আগে থেকে বুকিং থেকে থাকে, তাহলে হোটেল থেকে গাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলুন। বাকি দিনটি বিশ্রাম নিন বা পায়ে হেঁটে অল্প চারিপাশে দেখে নিতে পারে রত্নগিরির রূপ।

প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Ratnagiri, Odisha, India by Aninda De

এই অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ প্রাচীন মহাবিহার বা বৌদ্ধ গুম্ফা, যা তৈরি হয়েছিল গুপ্ত রাজা নরসিংহ বলাদিত্যের সময়ে এবং কালচক্রতন্ত্রের বিকাশের পিছনে হয়ে উঠেছিল গুরুত্বপূর্ণ। ললিতগিরি, উদয়গিরি এবং রতনাগিরিকে একসাথে উড়িষ্যার সোনালী ত্রিভুজ বলা হয়।

দ্বিতীয় দিন

আজ ললিতগিরি, রতনাগিরি এবং উদয়গিরি দেখতে দেখতে চলে যাব সুদূর অতীতে। প্রাচীন বৌদ্ধ গুম্ফা এবং হিন্দু মন্দির ছাড়াও এই অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় নানা ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক দ্রষ্টব্য; যেমন - টেরাকোটার সীলমোহর, ব্রোঞ্জের মূর্তি, গুপ্তযুগের প্রাচীন মুদ্রা। সময় করে চলে যান লানগুড়ি পর্বতে, যেখানে পাথর কেটে তৈরি হয়েছে ৩৪টি বৌদ্ধ স্তূপ।

সুদূরের কোনও এক বৌদ্ধ সময়ের কালে (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Udaygiri, Odisha, India by Aninda De

ঘোরা হয়ে গেলে রাত কাটাতে চলে যান পুষ্পগিরিতে

তৃতীয় দিন

আজ চলে যান খোলা গ্রাম, ভিতরকণিকা জঙ্গলের প্রবেশদ্বারে। তবে সকাল সকাল শুরু করুন, কারণ ড্রাইভ করে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা। বোট সাফারি করে প্রবেশ করুন এই ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে এবং সারাদিন কাটান ভিতরকণিকার সৌন্দর্য দেখে।

অভয়ারণ্যের মধ্যে (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Bhitarkanika, Odisha, India by Aninda De

চতুর্থ দিন

পেন্থা সি বিচ

আপনি ইচ্ছে করলে আজকেও ভিতরকণিকার মধ্যে আরেকটি বোট সাফারি করতে পারেন, বা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে পারেন গোটা এলাকাটি। অন্যথায় চলে আসুন এই অভয়ারণ্য থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের পেন্থা বিচে। ভুবনেশ্বর - কটক রাস্তায় অন্যদিকে বেঁকে গিয়ে পেন্থাতে। পেন্থা ৩৫ কিলোমিটার লম্বা গহীরমঠ বিচের একটি অংশবিশেষ। এই অঞ্চলেই অলিভ রিডলি কচ্ছপদের সমাগম দেখা যায়। নিকটবর্তী হ্যাচারিতে গিয়ে দেখতে পারেন কীভাবে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এই ডিমগুলির সংরক্ষণ করেন।

আপনি বেশ অনেকটাই নির্বিঘ্নে সময় কাটাতে পারবেন (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Pentha Sea Beach, Padmanavpatna, Odisha, India by Aninda De

প্রান্তিক অঞ্চলে বেড়ানোর সময়ে সবসময় দায়িত্বশীল ভাবে ভ্রমণ করুন পরিবেশের কথা মাথায় রেখে। পরিবেশের উপরে বেড়ানোর সময় কীভাবে ঋণাত্মক প্রভাব এড়িয়ে চলা যায় তা জানতে হলে পড়তে পারেন এই আর্টিকলটি।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)