উত্তর-পশ্চিম সিকিমের পাহাড়ি উপত্যকা জোঙ্গু - রইল কিছু লেপচা হোমস্টের সন্ধান...

Tripoto
Photo of উত্তর-পশ্চিম সিকিমের পাহাড়ি উপত্যকা জোঙ্গু - রইল কিছু লেপচা হোমস্টের সন্ধান... 1/1 by Aninda De
ছবি সংগৃহীত

লেপচা উপকথা অনুযায়ী তাঁদের স্বর্গ পরিচিত মায়াল-ল্যাং নামে। সারাজীবনের পুণ্যসঞ্চয়ের মাধ্যমে মায়াল-ল্যাং এ প্রবেশের অধিকার অর্জন করে নিতে পারে মানুষ। ষাটের দশকের শুরুর দিকে সিকিমর রাজবংশের প্রতিনিধিরা উত্তর সিকিমের জোঙ্গু অঞ্চলটিকে লেপচা সম্প্রদায়ের মানুষদের বসবাসভূমি হিসাবে চিন্হিত করেন। জোঙ্গু অঞ্চলের সৌন্দর্য এবং অনির্বচনীয় প্রাকৃতিক শোভার কারণে এখানটিকে স্বর্গীয় মায়াল ল্যাং এর প্রবেশ পথ হিসাবেও গণ্য করা হয়।

বর্তমানে পর্যটকরা দুর্গম জোঙ্গু অঞ্চলেও পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন এবং পাল্লা দিয়ে প্রচলন হয়েছে জোঙ্গুতে থাকার নানান ব্যবস্থাও। তবে মনে রাখবেন, এই দুর্গম অঞ্চলে এখনো হোটেল বা বিলাসবহুল কোনও রিসর্ট-এর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু আছে স্থানীয় লেপচা পরিবারের বিভিন্ন বাড়ি, যেগুলি বর্তমানে হোম-স্টে হিসাবে পর্যটকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। বিলাসবহুল না হলেও, লেপচা হোম স্টেগুলির পরিচয় তাদের আন্তরিকতায় আর অতিথিবৎসল ব্যবহারে। আসুন দেখে নি জোঙ্গুর কিছু নাম করা হোম স্টের খবর।

মায়াল ল্যাং হোম স্টে

জোঙ্গু অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম পাসিংডাং, আর এই পাসিংডাং গ্রামের মায়াল ল্যাং হোম স্টে এই অঞ্চলের সবথেকে জনপ্রিয় হোম স্টে। বাড়িটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে এর সামনে একটু নীচ দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি নদীটি। হোম স্টের বারান্দায় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীর কলতান শুনতে শুনতে কাটিয়ে দেওয়ার মতো শান্তিপূর্ণভাবে দিন কাটাতে চাইলে, আসতেই হবে এইখানে।

মায়াল ল্যাং হোম স্টেতে আপনার হোস্ট হবেন গ্যাৎসো লেপচা এবং ওনার পরিবার, যার মধ্যে আছে তাঁদের পোষ্য কুকুর বিড়ালগুলিও।

যোগাযোগ : gyatso@mayallyang.com

লিংথেম লিয়াং হোম স্টে

আপার জোঙ্গু অঞ্চলের আরেক নয়নাভিরাম গ্রাম হল লিংথেম। ছোট্ট এই পাহাড়ি গ্রামটি যেন দৈনন্দিন শহুরে সভ্যতা থেকে শত হস্ত দূরে। চারিপাশে সারি সারি পাহাড় যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রহরীর মতো। চারপাশে দেখতে পাবেন এলাচ এবং অন্যান্য পাহাড়ি শস্য এবং ফলের চাষ। পরিবেশ বান্ধব এই হোম স্টে থেকে হাঁটা পথে চোখে পড়বে অনেক ছোট বড় পাহাড়ী ঝরণাও।

প্রধান সড়ক হতে এই হোম স্টের দোরগোড়ায় পৌঁছতে আপনাকে অতিক্রম করতে হবে বেশ কিছু সিঁড়ি, তাই সেই মত প্রস্তুত হয়ে এগোনোই ভাল। সাংদুপ লেপচা থাকবেন আপনাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে। কাঠ এবং পাথর দিয়ে তৈরি এই কটেজ স্টাইল হোম স্টেটি পাহাড়ি আতিথেয়তা উপভোগ করার এক আদর্শ স্থান।

যোগাযোগ : lingthemlyang@gmail.com

জোঙ্গু লি হোম স্টে

জোঙ্গু এলাকাটি আপার এবং লোয়ার জোঙ্গু এলাকার মধ্যে বিভক্ত, এবং যথারীতি অপার জোঙ্গু অঞ্চলটি আরও দুর্গম, আরো শীতল, কিন্তু নিঃসন্দেহে আরও সুন্দর। এই অঞ্চলের লিংডং গ্রামে সোনাম তোপগে এবং তাঁর পরিবার চালান জোঙ্গু লি হোম স্টে। ছোট্ট, ছিমছাম এই হোম স্টে চারিপাশের প্রাকৃতিক শোভা দেখতে পাওয়ার জন্যে আদর্শ। আছে চারিদিকে অজস্র ট্রেকিং ট্রেল। আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার স্পষ্ট ভিউও আপনি পাবেন এই হোম স্টে এবং আপার জোঙ্গুর বিভিন্ন স্থান থেকেই।

ইকোট্যুরিজমের উপর ভিত্তি করে এই হোম স্টেটি গড়ে তোলা হয়েছে। এই অঞ্চলের অন্যান্য স্টেগুলির তুলনায় এখানে আধুনিক সুযোগসুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। প্রয়োজনমতো রিভার ওয়াক, ফিশিং আর লেপচা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে দেন এঁরা।

যোগাযোগ : dzongulee79@yahoo.com

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

আপার এবং লোয়ার জোঙ্গু বেশ পাহাড়ি, গ্রামীণ এবং অভ্যন্তরীণ জায়গা। সেল ফোন রিসেপশন, বা ইন্টারনেটের সুবিধা এখানে ভালো মতন পাওয়া যায় না।

এই অঞ্চলের হোম স্টে গুলি নিজেদের পরিবারের সঙ্গেই পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। হোটেল বা রেস্টুরেন্টের মতো সার্ভিস আশা না করাই শ্রেয়।

প্রতিটি হোম স্টে তেই আপনি পেয়ে যাবেন থাকার সঙ্গে খাওয়ার ব্যবস্থাও এবং সমস্ত কিছু তৈরি করা হয় টাটকা, অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করা শস্য এবং অনাজ দিয়ে। ভেজাল কোনও খাবার এখানে নেই, শুধুই স্বাস্থ্যকর সুস্বাদু ঘরোয়া লেপচা খাবার।

জোঙ্গু বেশ শীতল, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে গরম জামাকাপড় নিয়ে যাওয়া উচিত এবং পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটা চলা করতে হতে পারে, তাই বয়স্ক পর্যটকদের বেশি করে সতর্ক থাকা উচিত এখানে।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।