সমুদ্র দিয়ে ঘেরা দেশ জাপানের একটি ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ হল ওকুনোসিমা। এই দ্বীপটি মূলত হিরোসিমা অঞ্চলের তাকেহারা শহরের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত। বিস্তীর্ণ তৃণভূমি থেকে উন্মত্ত সমুদ্র আবার সমুদ্র তীরবর্তী সুসজ্জিত বিচ রিসোর্ট থেকে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি সমস্ত কিছুই যেন এই দ্বীপের সঙ্গে একই সূত্রে আবদ্ধ।
সম্পূর্ণ দ্বীপ জুড়ে রয়েছে অসংখ্য খরগোশ। তবে এই খরগোশগুলি বেশ বন্ধুসুলভ, বিশেষত মানুষের সঙ্গ এদের বেশ পছন্দের। জনপ্রিয়তার আড়ালে থেকে যাওয়া এই দ্বীপটি ইউরোপিয়ান খরগোশদের প্রধান বাসস্থানের মর্যাদা পেয়েছে । আর সেই কারণেই ওকুনোসিমা ৱ্যাবিট আইল্যান্ডের তকমায় ভূষিত হয়েছে ।
ওকুনোসিমা দ্বীপের ভয়ঙ্কর এবং রহস্যময় অতীত -
খরগোশদের ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করলেও, এই দ্বীপের ইতিহাসটা কিন্তু খুবই করুণ । ১৯২৯ সালে অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে জাপান সরকার কর্তৃপক্ষ ওকুনোসিমাতে লোকচক্ষুর আড়ালে বিষাক্ত গ্যাসের পরীক্ষা -নিরীক্ষা করেন ।তাই স্থানীয় মানুষরা ওকুনোসিমাকে বিষাক্ত গ্যাসের দ্বীপপুঞ্জ বলে চিহ্নিত করেছেন। সেই সময় এই পরীক্ষার জন্য সরকার কর্তৃপক্ষ জাপানের মানচিত্র থেকে ওকুনোসিমাকে বাদ দিয়ে দেন।
এই বিষাক্ত গ্যাস ঠিক কতটা ক্ষতিকর, সেই পরীক্ষার জন্যই মূলত খরগোশদের এই দ্বীপে আনা হয়। স্থানীয় লোককথা অনুসারে, পূর্বে পরীক্ষা করার জন্য যে খরগোশগুলি আনা হয়েছিল, বর্তমান খরগোশ গুলি তাদেরই বংশধর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পরীক্ষা- নিরীক্ষার পর সেই খরগোশদের মেরে ফেলা হয় ।
এছাড়াও,এই খরগোশদের নিয়ে একটি গুজবও প্রচলিত আছে। কেউ বলেন কোনও এক ব্রিটিশ দম্পতি খরগোশদের এই দ্বীপে নিয়ে আসেন। আবার কিছু সংখ্যক মানুষের ধারণা, পূর্বে কাছাকাছি একটি স্কুলে এই খরগোশগুলি বসবাস করত, ১৯৭১ সালে এদের মুক্ত করে দেওয়া হয়। ২০০৭ সালের গণনা অনুযায়ী এখানে মোট ৩০০টি খরগোশ ছিল, তারপর ২০১৭ সালে গণনায় জানা গিয়েছে এখানে খরগোশের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০০ থেকে ১০০০ ।
ভ্রমণকালীন সময়ে খরগোশদের সুরক্ষা সম্পর্কিত কয়েকটি তথ্য -
১.খরগোশদের কোনওভাবে কোলে নিয়ে আদর করবেন না । সাধারণত খরগোশরা একটু ভীতু প্রকৃতির হয় । তাছাড়াও এগুলি বন্য খরগোশ, তাই এদের কোনওরকম ক্ষতি হলে যত্ন নেওয়ার জন্য কোনও রকম ব্যবস্থা উপলব্ধ নেই ।
২. রাস্তার উপর এদের খেতে দেবেন না । খাবার পেলে খরগোশরা খাবারের দিকেই মনোনিবেশ করে। অনেক সময় এই মনোনিবেশের কারণে গাড়ির ধাক্কায় খরগোশদের মৃত্যু হয় ।
৩. মানুষের খাদ্য খরগোশদের খেতে দেবেন না । পাউরুটি, বা অন্যান্য শাকসব্জি খরগোশদের পাচনতন্ত্রে ক্ষতি করে, যার ফলে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৪. এই খরগোশগুলিকে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।' ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন এন্ড হান্টিং ল' - এর নির্দেশ অনুযায়ী, পর্যটকদের এই স্থান থেকে খরগোশদের নিয়ে যাওয়ার কোনো অনুমতি নেই। তাই এই আইন সম্পর্কে সতর্ক থাকাই ভাল।
ওকুনোসিমা দ্বীপে কী কী করবেন ?
• বিষাক্ত গ্যাস মিউজিয়াম দর্শন করে নিতে পারেন ।
• ন্যাশনাল পার্ক রিসোর্ট হোটেলে রাত্রিবাস করে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার সঙ্গে সঙ্গে খাবার সেরে নিন।
•ছোট্ট মিষ্টি চটপটে খরগোশদের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে নিতে পারেন ।
• সাইকেল ভাড়া করে সম্পূর্ণ দ্বীপটা ঘুরে নিন ।
• লাইটহাউস থেকে দ্বীপের সৌন্দর্য দর্শন করে নিন। সময় থাকলে এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখার সুযোগটা হাত ছাড়া করবেন না ।
• ফেরার পথে ৱ্যাবিট আইল্যান্ডের স্মৃতি হিসেবে টুকটাক শপিং ও সেরে নিতে পারেন ।
কীভাবে ওকুনোসিমা দ্বীপে পৌঁছবেন?
কলকাতা থেকে বিমানে চেপে পৌঁছে যান হিরোসিমা বিমানবন্দর । বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে ২০মিনিটের যাত্রা শেষে পৌঁছে যান তদনোমি। জাপানের অন্যতম প্রধান বন্দর তদনোমি থেকে ফেরি সহযোগে মাত্র ১৫ মিনিটের যাত্রা অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন ওকুনোসিমা দ্বীপপুঞ্জ ।
এই নিরিবিলি দ্বীপে কীভাবে এল এই খরগোশগুলো? এটা সত্যি সত্যিই মনুষ্য মস্তিস্কপ্রসূত কাজ নাকি কোনো রহস্য? আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমিক হন অথবা রহস্য সন্ধানী ওকুনোসিমা দ্বীপে আপনার জন্য রইলো উষ্ণ অভ্যর্থনা।