গাছের প্রতি আমাদের প্রত্যেকেরই অন্যরকম ভালবাসা রয়েছে। কিন্তু কখনও কখনও বাড়িতে জায়গার অভাবে যেমন গাছ লাগিয়ে ওঠা হয় না, তেমনি বাড়ির সকল সদস্যরা যদি কর্মরত হন তাহলে সেই গাছের যত্ন করে ওঠা প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। তবুও বহু বৃক্ষপ্রেমী মানুষ আছেন যারা এই সমস্ত বাধা কাটিয়ে নিজের ঘরের মধ্যে একটি ছোট্ট বাগান করে তুলেছেন সম্পূর্ণ ইনডোর প্লান্ট দিয়ে। আর তাতে এনাদের খুব একটা অসুবিধায় পরতে হয় নি।
তাহলে দেখে নেওয়া যাক, আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমী হন এবং আপনার হাতে যদি খুব কম সময়ে থাকে তাহলে কী কী গাছ আপনি কিনে ঘর থেকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারবেন!
কিছু ইনডোর প্লান্টের তালিকা-
১. মানি প্লান্ট (MONEY PLANT)-
ফেংশ্যুই ও বাস্তু মতে, এই গাছ ধনসম্পত্তি বৃদ্ধির জন্য অনেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
২. পাম প্লান্ট (PALM PLANT)-
এটি দেখতে খুব সুন্দর হয় এবং এর পরিচর্যার জন্য তেমন কোন খরচ-খরচা লাগে না। সামান্য একটু জল দিলে এই গাছ বহুদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। সূর্যরশ্মি তেমন প্রয়োজন পড়ে না।
৩. স্নেক প্লান্ট (SNAKE PLANT)-
এই গাছকে মাদার-ইন-লউস টাঙ বলে ডাকা হয়। এটি দেখতে খুব সুন্দর এবং প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
৪. স্পাইডার প্লান্ট (SPIDER PLANT)-
এই গাছটি ঘরের বাতাসকে পরিশুদ্ধ করতে ব্যবহার করা হয়।
৫. ব্যাম্বো প্লান্ট (BAMBOO PLANT)-
এটি আকারে খুব ছোট হয় এবং অনেকে একটি নিজের ভাগ্য ফেরানোর জন্য বাড়িতে নিয়ে আসেন।
৬. সং অফ ইন্ডিয়া (SONG OF INDIA)-
এই গাছের পাতাগুলি তুলনামূলক ছোট। তবে এই গাছকে তাড়াতাড়ি বাড়ন্ত করে তুলতে পরোক্ষভাবে সূর্য রশ্মির প্রয়োজন হয়।
৭. স্যাঙ্গনিয়াম প্লান্ট (SYNGONIUM PLANT)-
এই গাছের পাতাগুলো বেশ রঙীন এবং দেখতে অনেকটা তীর চিহ্নের মত। এই ধরনের গাছ বৃদ্ধি পেতে অনেকটা সময় লেগে যায়।
৮. পিস লিলি (PEACE LILY)-
যে সমস্ত বৃক্ষ প্রেমীরা গাছ লাগাতে চান অথচ গাছের পরিচর্যা তেমনভাবে করতে চান না তাদের জন্য এই কাজটি আদর্শ। পিস লিলি প্লান্ট সূর্যালোক ছাড়া সপ্তাহে একবার জল দিলেই বেঁচে থাকতে পারে।
৯. জিজি প্লান্ট (Zz PLANT)-
এ ধরনের গাছ দেখতে সুন্দর হয়।
১০. রবার প্লান্ট (RUBBER PLANT)-
সাধারণত এই ধরনের গাছ আকারে বেশ বড় এবং এই গাছের পাতাগুলো অনেক বড় এবং উজ্জ্বল হয়।
ইনডোর প্লান্টের যত্ন-
• এই গাছগুলিকে ছোট-বড় টবে বা বোতলের মধ্যে কিংবা সুন্দর দেখতে কিছু পাত্রে সাজিয়ে রাখতে হয়।
• সপ্তাহে অন্তত একবার পরিষ্কার করতে হয় এবং মাঝে মাঝে ট্রিমিং করার প্রয়োজন হয়।
• ইনডোর প্লান্টের তেমন একটা সূর্য রশ্মি প্রয়োজন পরে না। তাই কিছু কিছু গাছকে ঘরের কোনায় অনায়াসে রাখা যায়। আবার কিছু কিছু গাছের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে সূর্য রশ্মি প্রয়োজন পরে বলে জানলার পাশে বা পর্দার আড়ালে রাখতে হয়।
• এই ধরণের গাছে সপ্তাহে একবার আবার কোনও কোনও গাছে দুই সপ্তাহে একবার জল দিলেও চলে।
• ইনডোর প্লান্টের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় গাছের মাটি শুকিয়ে যাওয়ার পর জল দেওয়া প্রয়োজন।
• ইনডোর প্ল্যান্ট বৃদ্ধির জন্য কোন রকম সার মাটির প্রয়োজন পড়ে না।
• অতিরিক্ত সূর্যালোকে এইসমস্ত গাছ নষ্ট হয়ে যায়।
• এই ধরনের গাছ পরিচর্যার জন্য খরচ-খরচা খুবই সামান্য হয়ে থাকে।
• এই কাজ বাড়িতে রেখে অনায়াসে পরিবারের সকলে ঘুরতে যেতে পারেন, কারণ জল না পেলেও এই ধরনের গাছ সহজে শুকিয়ে যায় না।
ইনডোর প্লান্টের কার্যকারিতা-
• ঘরের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি সৃষ্টি করে।
• প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করে (নাসার তথ্য অনুযায়ী স্নেক প্লান্ট ঘরের মধ্যে রাখলে ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন দেয়)।
• ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
• মনকে সতেজ করে তোলে।
• মানসিক স্বাস্থ্যকে সবল করে তোলে।
ইনডোর প্লান্ট রাখার জায়গা-
• ঘরের মধ্যে যে কোনও জায়গায় এই ধরনের গাছ রাখা যায়।
• ছোট ছোট গাছগুলিকে সুন্দর একটি পাত্রে সাজিয়ে তা চায়ের টেবিল, ডাইনিং টেবিল বা কম্পিউটার টেবিলের সামনেও রাখা যায়।
• কিছু কিছু ইনডোর প্লান্ট বাথরুমেও ঝুলিয়ে রাখা হয়।
• সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ঘরের যে কোনও জায়গায় যায়।
• কখনও কখনও ঘরের উপরে কার্নিশে এই গাছ রাখা হয়।
সতর্কীকরণ-
সাধারণত ইনডোর প্লান্ট এমনি কোনরকম ক্ষতি করে না। তবে নাসার সমীক্ষায় বলা হয়েছে- রবার প্লান্ট, পিস লিলি এবং স্নেক প্লান্টের পাতায় কিছু বিষাক্ত উপকরণ রয়েছে, যার ফলে এগুলো যদি বাড়ির শিশুরা বা কোন গৃহপালিত পশু আহার হিসাবে গ্রহণ করে থাকে, তবে সেই বিষ থেকে তাদের শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে।