ভ্রমণপ্রিয় মানুষ হিসেবে যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, আপনার স্বপ্নের শহরটি কি? তাহলে আপনার উত্তরটি নিশ্চয়ই তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গের শীতলতায় পরিপূর্ণ ইউরোপের জনপ্রিয় শৈলশহর সুইজারল্যান্ড হবে তা বলাই বাহুল্য | এই স্বপ্নের স্থানটি কিন্তু এই ভারতেও স্বমহিমায় বর্তমান আছে | ভারতে অবস্থিত অনুরূপ এই স্বপ্নের স্থানটি হল সিকিম | তাই সুইজারল্যান্ড ভ্রমণের আগে সিকিম সম্পর্কে এই ১০টি তথ্য জেনে নিন | আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে এই তথ্যগুলোর জানার পর আল্পসের পরিবর্তে হিমালয়কেই একমাত্র ভ্রমণ ডেস্টিনেশন হিসেবে বেছে নেবেন |
১. পর্বতশৃঙ্গ:
সুইজারল্যান্ড ভ্রমণের প্রধান কারণ হল আল্পস দর্শন | নিঃসন্দেহে আল্পস অবশ্যই সুন্দর, তবে হিমালয়ের সৌন্দর্য অনন্য; যার সঙ্গে কোনও রকম তুলনা করাই সম্ভব নয় | তুষার পরিবেষ্টিত হিমালয়ের যে অসাধারণ রূপশৈলী সিকিমে প্রত্যক্ষ করবেন, তার কাছে সুইজেরল্যান্ডের সৌন্দর্য নিতান্তই ফিকে | সিকিমের তুষারশুভ্র হিমালয়, শীতলতার নরম ছোঁয়া, শান্ত পরিবেশ সব কিছু মিলেমিশে আপনার মনে হতেই পারে আপনি যেন দেবতাদের রাজ্যে বিচরণ করছেন | তবে স্কি করতে চাইলে কুলু-মানালিকে বেছে নিতে পারেন |
২. লেক:
সুইজেরল্যান্ডের লেকগুলো পর্যটকদের কাছে অন্যতম দর্শনীয় বিষয়বস্তু | কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ট থেকে হাজার হাজার মিটার বা তারও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত পাহাড় পরিবেষ্টিত এবং বরফাচ্ছন্ন লেকের প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছেন কখনও? সিকিমে রয়েছে এমনি কয়েকটি দৃষ্টি আকর্ষক লেক, যার সৌন্দর্যকে উপভোগ করা যে কোনও মানুষের জীবনের একমাত্র অভিপ্রায় হতে পারে | সিকিমের এই অবিশ্বাস্য সুন্দর লেকগুলো হল ছাঙ্গু, গুরুদংমার প্রভৃতি | তবে এই লেক দর্শনের আগে সিকিম গভর্মেন্টের অনুমতির প্রয়োজন হয়; কিন্তু নির্দিষ্ট কয়েকটি ডকুমেন্টের বিনিময়ে লেক পরিদর্শনের অনুমতি সহজেই পাওয়া যায় |
৩. কেনাকাটি:
কেনাকাটির দিক থেকে সুইজেরল্যান্ড ঘড়ির জন্য বেশ প্রসিদ্ধ | তবে সিকিমে সেই বিখ্যাত ঘড়ির দেখা না পেলেও, গ্যাংটকের M.G.-মার্কেট থেকেই আপনার পছন্দমত জামাকাপড়, জুতো, ঘড়ি ইত্যাদি কিনতে পারেন | এখানে সুইজেরল্যান্ডের তুলনায় অনেকটাই কম খরচে আর সুলভমূল্যে আপনি আপনার পছন্দের জিনিসটি কিনতে পারবেন |
৪. রেস্তোরাঁ এবং আহার:
ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই সুস্বাদু খাদ্য অঙ্গাঙ্গিকভাবে যুক্ত | সিকিমের বিখ্যাত মোমোর স্বাদ কখনও চেখে দেখেছেন? এখানকার স্থানীয় মানুষের হাতের রান্না করা খাদ্য বিশেষত মোমোর মধ্যে রয়েছে জিভে জল আনা স্বাদ | এই মোমোগুলো যেমন ফ্রেশ, তেমনি রসালো | সিকিম ভ্রমণে গিয়ে ইয়াক এর দুধ দিয়ে নির্মিত চিজ সহযোগে মোমো টেস্ট করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না | আহারের দিক থেকে কিন্তু সিকিমের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের কোনও তুলনাই চলে না |
৫. চকোলেট:
সুইজারল্যান্ডের সুইস চকলেট অবশ্যই সুস্বাদু, এই চকলেটের পরিচিতি সর্বজনীন | কিন্তু M.G-মার্কেটে অবস্থিত বেকারীগুলোর হ্যান্ডমেড চকোলেটের স্বাদটাও কিন্তু বেশ লোভনীয় | সুইস চকোলেটের মতো অভিনবত্বের স্বীকৃতি না পেলেও, চকোলেটের স্বাদ পরিপূরণের জন্য এই হ্যান্ডমেড চকলেট যথেষ্ট | আর এই চকলেট স্মৃতি হিসেবে নিয়ে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত শুল্কের প্রয়োজন হয় না |
৬. হাইকিং:
ভ্রমনপ্রিয় মানুষ ট্রেকিং-এর একমাত্র স্থান হিসেবে সুইজারল্যান্ডকে বেছে নেন | ভারতে ট্রেকিং-এর জন্য সিকিমও কিন্তু আদর্শ স্থান | তবে উপরিপাওনা হিসেবে এখানে আপনি নিজের দক্ষতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনও ট্রেককে বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারেন | সিকিমের সবচেয়ে কঠিন ট্রেকটি হল দজোংড়ি ট্রেক | আর পর্বতশৃঙ্গ কে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করার জন্য খাংছেন্দেজোঙ্গা ট্রেক এক্কেবারে আদর্শ |
৭. ওয়াইন:
ফ্রেঞ্চ এবং ইতালিয়ান সভ্যতার তীক্ষ্ণ প্রভাব লক্ষ্য করা যায় সুইজেরল্যান্ডে, তাই এখানে ওয়াইন সহজলভ্য | আপনি যদি প্রকৃত সুরাপ্রেমী হন তাহলে সিকিমের রাইস বিয়ার ট্রাই করে দেখতে পারেন | এছাড়াও, স্থানীয় ব্র্যান্ড নির্মিত বিভিন্ন ধরণের ওয়াইন পাওয়া যায় | এখানে স্থানীয় ব্রান্ড নির্মিত বিয়ার হিট এন্ড ডান্সবের্গের স্বাদও টেস্ট করে দেখতে পারেন |
৮. সংস্কৃতি:
সিকিমে অনেকগুলো মন্দির ও মনেস্ট্রি রয়েছে | আর এই রাজ্যটি স্থানীয় সংস্কৃতির একমাত্র পিঠস্থান; সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের মানুষের প্রাণকেন্দ্র | এখানে ভ্রমণে গিয়ে খুব সহজেই আপনার চোখে ধরা দেবে বৈচিত্র্যের মধ্যেও ঐক্যের সমন্বয় | প্রাচীন সভ্যতার একটি নিদর্শন হিসেবে রাবডেন্টস ফোর্ট-এর ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করে আসতে পারেন | প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এটি পেমায়ণগৎসে মনেস্ট্রির নিকটে অবস্থিত |
৯. দুগ্ধ শিল্প:
আমরা ভারতীয় হয়ে বিদেশে গরু এবং সেখানকার দুগ্ধ শিল্প পরিদর্শন করতে যাব, এটি এককথায় অর্থহীন | তার থেকে সিকিমের প্রসিদ্ধ চামরিগাই-এর দর্শন পাওয়া যথেষ্ট সার্থকতার পরিপূরক |ইচ্ছা করলে এখানে আপনি চামরি গাই এর পিঠে চেপে সিকিম ভ্রমণের নতুন মাত্রা খুঁজে পেতে পারেন | তুষার শুভ্র হিমালয়ের পাদদেশে শান্ত অবলা এই জীবের দেখা পাওয়া বেশ সৌভাগ্যের ব্যাপার |
১০. বিভিন্ন আঞ্চলিকতার প্রভাব:
সুইজারল্যান্ড-এর মধ্যে যেমন ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ, জার্মানি প্রভাব লক্ষণীয়, ঠিক তেমনই সিকিমের পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত, উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্ত বিভিন্ন আঞ্চলিকতার প্রভাবের সঙ্গে সঙ্গেই পর্যটকরা নিত্য নতুন প্রাকৃতিক শোভার সাক্ষী থাকতে পারেন | পূর্ব সিকিম তথা গ্যাংটক বিশেষত আধুনিক সমাজের পরিমণ্ডলে গড়ে উঠেছে | পাব থেকে রেস্তোরাঁ কিংবা মানুষের পরিচ্ছদ থেকে আচরণ সমস্ত কিছুতে আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে | পেলিং বা পশ্চিম সিকিমের মূল আকর্ষণ হল ট্রেকিং, অবশ্যই এটিও সিকিমের সুন্দর একটি শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম | অন্যদিকে উত্তর সিকিমের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হল লাচেন এবং দক্ষিণ সিকিম এখনও পর্যটকদের নজরবন্দি হতে পারেনি তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে অতুলনীয় তা নিঃসংশয়ে বলাই যায় |
পরিশেষে এইটুকু বলতে পারি, চেঙ্গেন ভিসা প্রাপ্তি বা সুইজারল্যান্ড ভ্রমণের খরচের তুলনায় অনেক কম খরচে আপনি সিকিমে ভ্রমণ করে আসতে পারেন | আর সঙ্গে সিকিমের স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা এবং ব্যবহার আপনাকে মুগ্ধ করবেই | এবার আপনি স্থির করুন পাহাড়ের আঁকা বাঁকা গতিপথ ও প্রকৃতির রূপশোভায় মনোমুগ্ধ হতে সিকিমে আসবেন না খরচের বোঝা মাথায় নিয়ে আল্পস দর্শন করবেন? নিচে কমেন্ট বাক্স-এ লিখে আমাদের অবশ্যই জানান |
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)