বাঙালি মানেই কিন্তু আড্ডা তর্ক আলোচনা, তার সাথে যোগ্য সঙ্গত রাখে পেটপুজোর হরেক রকম আইটেম। এই তর্ক বিতর্কের আসরে কিন্তু বাঙাল বনাম ঘটির যুদ্ধ চলে আসছে আজীবন কাল ধরে। এপার বাংলার সংস্কৃতি না ওপার বাংলার ঐতিহ্য, ইস্টবেঙ্গল না মোহনবাগান, এই সব বাকযুদ্ধই কিন্তু শেষ পাতে এসে হয়ে যায় ইলিশ না চিংড়ি? আসলে মুখে মুখে যতই যুদ্ধ হোক, সব বাঙালির মিল কিন্তু একসাথে বসে ভুরিভোজনেই।

আবার দ্বন্দ্বের কথা উঠলই যখন, তখন কি আর বনেদি উত্তর কলকাতার সাথে আধুনিক দক্ষিণ কলকাতার সমানে সমানে টক্করের কথা কি না বলে থাকা যায়? কলকাতা শহরের এই দুই মেরুর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে হাড্ডাহাড্ডি এক রেষারেষি। কে ভালোর লড়াইয়ে তাই কলকাতার বুকে অহরহ হয়ে চলেছে ঘটি-বাঙাল আর উত্তর-দক্ষিণের ধুন্ধুমার যুদ্ধ।
তবে সুখের কথা, সবারই মিলন হয় ভোজনের আয়োজনে। উত্তর আর দক্ষিণের এই খাঁটি বাঙালি রেস্টুরেন্ট গুলিতে রয়েছে এপার বাংলা আর ওপার বাংলার সেরা সেরা খাবারের সমারোহ। তাই যুদ্ধ ভুলে বাঙালিয়ানায় মজে উঠতে দেখে নিন আপনার আগামী খাঁটি বাঙালি খাদ্য-অভিযান কোথায় হতে চলেছে।
উত্তর কলকাতার আধুনিক বাঙালি রেস্টুরেন্ট
কেয়ার অফ বেঙ্গলি রেস্টুরেন্ট
হাতিবাগান চৌমাথায়, স্টার থিয়েটারের উল্টো দিকের বাড়ির দু তলায় বেশ কয়েক বছর ধরে রমরমিয়ে চলছে এই রেস্টুরেন্টটি। উত্তরের প্রাণকেন্দ্রের একদম মাঝামাঝি এই রেস্টুরেন্টটি সাধ ও সাধ্যের অন্যন্য মিশেল। আধুনিক এমবিয়েন্স এর মধ্যেও সাবেকি বাঙালিয়ানার ছোঁয়ায় জায়গাটি হয়ে উঠেছে অপরূপ।
ঠিকানা : ১০৮, শ্রী অরবিন্দ সরণী রোড
কী খাবেন : পাবদার তেল বড়ির ঝোল, কক্স বাজার মুরগি মশলা
দ্য ভোজ কোম্পানি
এস্প্ল্যানেড চত্বরে এক কোণে এই ছোট্ট রেস্টুরেন্টটি সত্যি এক হিডেন জেম। কম দামে প্রচন্ড ভালো বাঙালি খাবার খেতে হলে চলে আস্তে হবে এখানে। এনাদের বিশেষত্ব হল ওপার বাংলার হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন পদ ও রেসিপি নতুন যুগের উপযোগী করে পরিবেশন করা।
ঠিকানা : ৬০, হেমন্ত বসু সরণী, ডালহৌসি
কী খাবেন : লোইট্যা মাছ শীলে বাটা, ভেটকি বিন্দাস, কাঁচকি মাছের চচ্চড়ি...
ভজহরি মান্না
হাতিবাগানে স্টার থিয়েটারের নিচেই রয়েছে মনপসন্দ বাঙালি খাবারের আস্তানা, ভজহরি মান্না। এপার বাংলা আর ওপার বাংলার নানান আইটেম ছাড়াও পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম চপ কাটলেট এবং ভাজাভুজি। এনাদের নিরামিষ খাবারের সম্ভারও ঈর্ষণীয়। দু'দণ্ড শপিং বা আড্ডার মাঝে কিছুক্ষনের জন্যে বাঙালি স্টাইলে স্ন্যাক্ ব্রেক চাইলে, চলে আসুন এখানে।
ঠিকানা : ১৩, ভুপেন্দ্র বোস এভিনিউ, হাতিবাগান
কী খাবেন : ফাউল কাটলেট, ভেটকি রোল, কৈ সর্ষে, কাজলি মাছের ঝাল
দক্ষিণ কলকাতার আধুনিক বাঙালি রেস্টুরেন্ট
সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস
বাঙালির চিরপরিচিত খাবার নিয়েও যে বিশ্ব দরবারে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে করে দেখিয়েছিল এই রেস্টুরেন্ট চেনটি। বর্তমানে সল্টলেক এবং দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে এনাদের বিভিন্ন শাখা, তবে প্রথমবার যাওয়ার থাকলে অবশ্যই যান এনাদের আদি ব্রাঞ্চ, বালিগঞ্জে। বাঙালি রেস্টুরেন্ট গুলিতেও বাফে এবং থালি সিস্টেম চালু করার ব্যাপারে এনারাই পথ দেখিয়েছেন এবং খাবারের স্বাদের গুণে সাফল্য পেয়েছেন।
ঠিকানা : সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস
কী খাবেন : পালং ছানার কোফতা, ডাব চিংড়ি, মটনের পুর দেওয়া পটলের দোলমা, গন্ধরাজ ফ্রায়েড চিকেন
ওহ ক্যালকাটা
শহরের সেরা রেস্টুরেন্টগুলির মধ্যে একেবারে প্রথম শ্রেণিতে থাকার দাবিদার এই ওহ ক্যালকাটা চেনটি | বাঙালি ঘরোয়া খাবার কে একেবারে ফাইন ডাইনিং এর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে এই রেস্টুরেন্টের অবদান অনস্বীকার্য | শুধুমাত্র কলকাতায় নয়, সারা ভারত জুড়ে কলকাতার নাম উজ্জ্বল করে চলেছে ওহ ক্যালকাটা |
ঠিকানা : ফোর্থ ফ্লোর , ফোরাম মল , এলগিন রোড
কী খাবেন : ভাপা ইলিশ , মাতাল চিংড়ি , আম আদা গ্রিল্ড মাছ , ককটেলের মধ্যে দাবানল আর কাল বৈশাখী
আহেলী
ফাইন ডাইনিং এর চৌহুদ্দির বাইরে যদি গ্লোবাল মঞ্চে ফাইভ ষ্টার ডাইনিং এর পটভূমিকায় বাঙাল বা ঘটি , উত্তর বা দক্ষিণের বিবাদের মীমাংসা করতে হয়, তাহলে পিয়ারলেস ইনের আহেলী রেস্টুরেন্ট হতে পারে আপনার শ্রেষ্ঠ গন্তব্য | দেশ বিদেশের অতিথি থেকে শুরু করে প্রবাসী বাঙালিদের জন্যে সেরা বাঙালি খাবারের বিলাস বহুল আয়োজন এইখানেই পাবেন |
ঠিকানা : ১২ জওহরলাল নেহেরু রোড
কী খাবেন : কুমড়ো পাতায় চিংড়ি, ছোট বেগুনের পোস্ত, বিক্রমপুরী মুরগি কোর্মা, ধুম্রগন্ধী ইলিশ, রাবড়ি কলস