কলকাতার কাছাকাছি অফবিট উইকেন্ড ডেস্টিনেশনের হদিশ... প্ল্যানিং করতে পারেন বেশ তাড়াতাড়ি

Tripoto

কলকাতার শহুরে জীবনের বেড়াজালে হাঁপিয়ে ওঠার পর, জীবনে প্রয়োজন একটু শান্ত হয়ে ছুটি কাটানোর। কখনও একলা কখনও আবার ভালবাসার মানুষটির সঙ্গে বা পুরো পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে যদি কোথাও কিছুদিন শান্তিতে কাটিয়ে আসা যায়, তাহলে সমস্ত গ্লানি ও ক্লান্তি পেরিয়ে জীবনে খুঁজে পাওয়া যাবে নতুন উদ্যম। তবে আমরা অনেকেই পিছিয়ে যাই সময়ের অভাবে, কারণ কর্পোরেটের জাঁতাকলে ছুটি আর কোথায় পাওয়া যায়। তাই চলুন দেখে নিই এমন কিছু ডেস্টিনেশন, যা কলকাতা থেকে ৫০, ১০০ বা ২০০ কিলোমিটারের মধ্যেই। কয়েক ঘণ্টার দূরত্বের এই জায়গাগুলোতে ইচ্ছে করলেই শনিবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে, এক রাত কাটিয়ে আবার রবিবার রাতে বাড়িতে ফিরে আসতে পারবেন। না কাটা গেল অফিসের ছুটি, কিন্তু পেলেন দু'দিনের মুক্তির অবকাশ। অসুন দেখে নিই আসছে উইকেন্ডে কোথায় কোথায় যাওয়া যেতে পারে।

মৌসুনি আইল্যান্ড, নামখানা

দীঘা মন্দারমনির ভিড় এড়িয়ে যদি দু'দণ্ড শান্তির খোঁজ পেতে চান, তাও আবার সমুদ্রের সান্নিধ্যে, তাহলে এন.এইচ ১১৭ ধরে চলে আসুন নামখানার মৌসুনি দ্বীপে। ঝলমলে রৌদ্রোজ্জ্বল এই সমুদ্রতটে পাবেন নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ। খুব বেশি জনপ্রিয় না হওয়ায়, জায়গাটি এখনও মাত্রাতিরিক্তভাবে কমার্সিয়ালাইজড হয়ে যায়নি, ধরে রেখেছে নিজের প্রাকৃতিক সারল্য এবং সৌন্দর্য্যকে।

মৌসুনি আইল্যান্ডে নিরিবিলিতে বেশ অনেকটা সময় কাটাতে পারেন (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Mousuni, West Bengal by Aninda De

কীভাবে পৌঁছবেন : শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে বা বাসে নামখানা আসুন, সেখান থেকে হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদী পার করে (বর্তমানে ব্রিজ খুলে দেওয়া হয়েছে) পৌঁছে যান বাগডাঙা খেয়া ঘাট। নদী পেরিয়ে বাগডাঙা পৌঁছে টোটো করে চলে যান গন্তব্যে।

অযোধ্যা পাহাড়

ছোট নাগপুর মালভূমির পাথুরে পাহাড়ি ভূমিরূপের যে অংশটি পুরুলিয়ার অন্তর্গত, বাঙালির কাছে তা পরিচিত অযোধ্যা পাহাড় নামে। সমগ্র পাহাড়ি অঞ্চলটি জুড়ে আছে ছোট ছোট জলপ্রপাত, লেক, ঘন জঙ্গল এবং স্থানীয় মানুষদের বসবাস। এখানে এসে ঘুরে দেখতে পারেন পাখি পাহাড়, পারদি ড্যাম, তুর্গা ফলস, বামনি ফলস বা খৈড়াবেড়া লেক। থাকার জায়গায়ও কোনও অভাব নেই। পুরুলিয়ার গ্রামীণ জীবনযাত্রার সংস্পর্শে কাটিয়ে দিতে পারেন আপনার উইকেন্ড।

পাখি পাহাড়ের ছবি (সংগৃহীত)

Photo of Ajodhya, West Bengal, India by Aninda De

কীভাবে পৌঁছবেন : কলকাতা থেকে নিজের গাড়ি করে আসা সবচেয়ে সুবিধাজনক। না হলে রেলপথে নিকটবর্তী স্টেশন হল বরাভূম। বরাভূম থেকে গাড়ি ভাড়া করে ওপরে যাওয়া শ্রেয়।

গড়চুমুক

হুগলি নদী এবং দামোদর নদীর মিলনস্থলে দেখা পাবেন গড়চুমুক নামের এই ছোট্ট উইকেন্ড ডেস্টিনেশনের। নদীর মোহনায় সময় কাটিয়ে ঘুরে আসতে পারেন গড়চুমুক ডিয়ার পার্ক বা হরিণ উদ্যান থেকে। ভেতরে পাবেন হরিণ, ময়ূর, কুমীর, বিভিন্ন রকম পাখি, এবং অর্কিডের সম্ভার। অনুমতি নিয়ে ভেতরে ছোট পিকনিকও করতে পারেন সবাই মিলে।

গড়চুমুকে মনোরম পরিবেশে কাটাতে পারেন উইকেন্ড (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Garchumuk, Chandipur, West Bengal, India by Aninda De

কীভাবে পৌঁছবেন : কলকাতা থেকে গড়চুমুকের দূরত্ব মাত্র ৬৫ কিলোমিটার। এস্প্ল্যানেড থেকে গাদিয়ারার বাস ধরে ৫৮ নং স্টপে নামতে পারেন। অথবা ট্রেনে উলুবেরিয়া এসে সেখান থেকেও এগিয়ে যেতে পারেন। রিকশা বা টোটো পেয়ে যাবেন।

চুনাখালি

সুন্দরবনের কথা তো আমাদের সকলেরই জানা, কিন্তু ঠিক সুন্দরবনে ঢোকার মুখেই লুকিয়ে আছে এই ছোট্ট নদীমাতৃক গ্রাম, চুনাখালি। ক্যানিং থেকে ২০ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যেই রয়েছে এই জায়গাটি। স্থানীয় ফার্মে রাত কাটানো যেতে পারে। সবথেকে আকর্ষণীয় হল, এখানে আছে প্রচুর বাগদা চিংড়ির ভেড়ি। তাই টাটকা চিংড়ি মাছ খাওয়ার ইচ্ছে হলে এর থেকে ভাল জায়গা পাবেন না। তাছাড়াও করতে পারবেন হানা নদীতে বোটিং। বার্ড ফোটোগ্রাফি করার জন্যও বহু লোক এখানে আসেন।

কীভাবে পৌঁছবেন : ট্রেনে করে শিয়ালদহ থেকে চলে আসুন ক্যানিং, সেখান থেকে স্থানীয় গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন গন্তব্যে। নিজস্ব গাড়ি থাকলে সরাসরিও পৌঁছে যেতে পারেন।

চুপির চর, পূর্বস্থলী

পূর্বস্থলীর চুপির চর বা স্থানীয়রা যে জায়গাটিকে খাড়ি গঙ্গা বলে থাকেন, তা বিগত কিছু বছরে বার্ড ওয়াচারস বা যারা পাখি দেখতে যান, তাদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। স্থানীয় চরে, পাট ক্ষেতে, আম বাগানে বিভিন্ন রকম পাখি, যেমন হিরণ, আইবিস, মুরহেন, মাছরাঙা প্রায়শই দেখা যায়। স্থানীয় কটেজে থাকার সুব্যবস্থা আছে।

কীভাবে পৌঁছবেন : শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে করে চলে আসুন পূর্বস্থলী, সময় লাগে ৩ ঘণ্টার একটু বেশি। হাওড়া থেকেও আছে প্রচুর ট্রেন। স্টেশন থেকে টোটো নিয়ে চলে আসুন চুপির চরে।

হংসেশ্বরী মন্দির

হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় অবস্থিত, প্রায় ২০০ বছরেরও আগে প্রতিষ্ঠিত হংসেশ্বরী মন্দির কলকাতার খুবই কাছে, কিন্তু এখনও অতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। রাজা নৃসিংহ দেব রায়ের তত্ত্বাবধানে সৃষ্ট এই মন্দিরে মা কালীর আধারে পুজো হয় হংসেশ্বরী দেবীর। মন্দিরের গঠনশৈলীতে আছে তান্ত্রিক সৎচক্রভেদের প্রভাব। মূল মন্দিরের পাশেই রয়েছে অনন্ত বাসুদেব মন্দির। বহু দর্শনার্থী মন্দির দর্শনের পাশাপাশি স্থানীয় গ্রাম ত্রিবেণী বা আদিসপ্তগ্রামে পিকনিকের আয়োজনও করে থাকেন।

কীভাবে পৌঁছাবেন : হাওড়া থেকে ট্রেনে করে আসতে পারেন বাঁশবেড়িয়ায়, সেখান থেকে রিকশা করে পৌঁছতে পারেন মন্দির প্রাঙ্গণে। নিজস্ব গাড়িতে কলকাতা থেকেও সরাসরি পৌঁছনো যায়।

সুপ্রসিদ্ধ হংসেশ্বরী মন্দিরের কাঠামো (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Hangseswari Road, Bansberia, West Bengal, India by Aninda De

মায়াপুর

নবদ্বীপের নয়টি দ্বীপের অন্যতম হল মায়াপুর, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে মায়াপুরের গুরুত্ব অপরিসীম। হুগলি ও জলঙ্গী নদীর মাঝের এই গন্ত্যব্যে বহু দর্শনার্থী খুঁজে পান শান্তি এবং পুণ্য। এখানে দেখতে পারেন বিশাল ইস্কন মন্দির, যোগপীঠ মন্দির, প্রভুপদের সমাধি মন্দির এবং চাঁদ কাজীর কবরস্থান। কলকাতা থেকে মাত্র ১৩২ কিলোমিটার দুরত্বে এই জায়গাটি উইকেন্ড কাটিয়ে আসার জন্যে আদর্শ।

মায়াপুরের ইস্কন মন্দির (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Mayapur, West Bengal, India by Aninda De

কীভাবে পৌঁছবেন : হাওড়া থেকে সরাসরি ট্রেন আছে নবদ্বীপ ধামের। শিয়ালদহ থেকে ট্রেন পাবেন কৃষ্ণনগরের। কৃষ্ণনগরে নেমে বাসে করে মায়াপুর আসতে হবে।

হেরিটেজ রাজবাড়ীতে কাটান আপনার উইকেন্ড

যদি মনে হয় কোনও নির্দিষ্ট উইকেন্ড ডেস্টিনেশনে না গিয়ে, রাজকীয় আরামে বনেদী মেজাজে দুদিন বিশ্রাম করতে, তাহলে কলকাতার আসে পাশের বিভিন্ন রাজবাড়ীতে আপনাকে স্বাগতম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাওয়ালি রাজবাড়ি হোক, বা পাণ্ডুয়ার ইটাচুনা রাজবাড়ি, খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন এই হেরিটেজ স্টেগুলোতে। সাবেকি আঙ্গিকে থাকার পাশাপাশি পাবেন খাঁটি বাঙালি জমিদার বংশের ভুরিভোজ লাঞ্চে এবং ডিনারে। থাকবেন সহস্রাধিক বছরের পুরনো ঘরে, যেখানের চুন সুরকিতে ইতিহাসের ছাপ স্পষ্ট। মননশীল পুনরানয়নের মাধ্যমে প্যালেসগুলো হয়ে উঠেছে আগের থেকে আরও সুন্দর, আরও বিলাসবহুল। আর কলকাতা থেকে মাত্র তিন বা চার ঘণ্টার দুরত্বেই রয়েছে অনেকগুলো অপশন। আমাদপুর রাজবাড়ি, ঝাড়গ্রাম প্যালেস, মহিষাদল রাজবাড়ি, মহেশগঞ্জ এস্টেট, আছে পছন্দ হওয়ার মতো প্রচুর জায়গা।

লং উইকেন্ড স্পেশাল : উত্তরবঙ্গ

প্রতি বছর কিছু লং উইকেন্ড আমাদের প্রত্যেকের কাছেই নতুন করে ছুটি কাটানোর অবকাশ এনে দেয়। হাতে এক বা দুদিন বেশি থাকলে কিন্তু সাধ্যের মধ্যেই আছে গোটা উত্তরবঙ্গ। আগের দিন রাত্রি বেলার ট্রেনে চেপে চলে যান নিউ জলপাইগুড়ি, পরদিন সকালে ট্রেন থেকে নেমে সেখান থেকে ইচ্ছে মতো বেরিয়ে পড়তে পারেন দার্জিলিং, সিকিম বা ডুয়ার্সের দিকে। মংপং, কার্শিয়াং, জলঢাকা, লাভা, লোলেগাঁও, রিষপ, জলদাপাড়া, যে কোনও জায়গায় মনের শান্তিতে থেকে আসতে পারেন দুটি দিন। পাহাড়ি হোমস্টেতে থাকতে পারেন কোনো পাহাড়ি পরিবারের গেস্ট হিসেবে, তারাই করে দেবে আপনার খাওয়া দাওয়ার সব ব্যবস্থা। সকালবেলাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে দূরে দিগন্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে কখন সময় কেটে যাবে, আপনি নিজেও তার খোঁজ পাবেন না।

তাহলে চলুন, কলকাতা ছেড়ে বেড়িয়ে পরা যাক আসছে শনিবার নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে, উইকেন্ড কাটিয়ে আসি প্রকৃতির কোলে।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন