ভারতবর্ষ নিঃসন্দেহে বৈচিত্র্যময় দেশ। বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্যের সুর ধ্বনিত হয় এখানে। বৈচিত্র্য এখানকার সংস্কৃতিতেই মিশে রয়েছে। বৈচিত্র্য ভাষায়। বৈচিত্র্য শিল্প কলায়, এমনকি খাদ্যাভ্যাসেও কম-বেশি চোখে পড়ে।
নাগাল্যান্ডের স্বাস্থ্যকর খানা -পিনার পাশাপাশি গুজরাতের মিষ্টি স্বাদের আহার – এরকম বৈচিত্র ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে এতবেশি যে সবটুকুকে চেখে দেখা প্রায় অসম্ভব । তবু যদি মন চায় এই বৈচিত্রের যথাসম্ভব সাক্ষী হতে – রেলপথ আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
আপনাদের জন্য এখানে ১৫টি রেলস্টেশনের নাম তালিকাভুক্ত করলাম যা আপনাদের স্থানীয় খাদ্যবৈচিত্র্যের স্বাদ নিতে সফরসঙ্গী হতে পারেন
১) রাতলাম স্টেশনের বিখ্যাত কান্দা পোহা :
মধ্যপ্রদেশের প্রায় সমস্তটা জুড়েই পোহা (চিঁড়ে ) প্রধানতম প্রাতঃরাশ এবং রাতলাম স্টেশন চত্বরও তার ব্যাতিক্রম নয়। নিজস্ব রেসিপিতে বানানো পোহা যাত্রীদের বাধ্য করে ট্রেন থেকে নেমে তার স্বাদ গ্রহণ করতে। সুস্বাদু পোহা আর সঙ্গে গরম চা আপনার দিনটাকে সুন্দরভাবে শুরু করার জন্য আদর্শ প্রাতঃরাশ একথা বলতেই হবে ।
২) আজমির স্টেশনের বিখ্যাত কার্রি কচুরি:
রাজস্থান গুজরাট অঞ্চলে মুচমুচে কচুরি আর সাথে দহি কার্রি খুবই উপাদেয়। সমস্ত অঞ্চলটাতেই এই পদ এতটাই প্রিয় যে প্রায় প্রত্যেক এলাকাতেই আপনি দেখতে পাবেন কাউকে না কাউকে এই পদ বিক্রি করতে। আপনি এর পরের বার যখনই আজমির রেল স্টেশনের ওপর দিয়ে যাবেন তখনই একবার চেখে দেখতে পারেন এই পদটি। সত্যিই আপনার ভাল লাগবেই লাগবে।
পঞ্জাব ভোজনরসিকদের কাছে একটা স্বর্গ রাজ্য যেখানে মানুষের দিন শুরু হয় স্টাফড পরোটা দিয়ে আর শেষ হয় ফ্রায়েড চিকেনে। তবে এখানকার ছোলা বটোরা সত্যিই তারিফযোগ্য। আপনি যদি সত্যিই ভোজনরসিক হয়ে থাকেন তো এই পদটিকে আপনি ‘না’ করতেই পারবেন না।
৪) অমৃতসর স্টেশনের বিখ্যাত অমৃতসরী লস্যি:
যদি আপনি পঞ্জাব সফরে বেড়িয়েও একগ্লাস মিষ্টি লস্যিতে গলা না ভিজিয়েছেন তাহলে সত্যিই আপনাকে পস্তাতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এখানে ছুটে আসেন এই লস্যির টানে।
৫) গুয়াহাটির লালশাহ্:
আমরা প্রত্যেকেই জানি চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে অসম ভারতের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারী| এই চা চাষ এখানকার হাজার হাজার মানুষের জীবিকা। আঞ্চলিকভাবে লাল শাহ্ চা অন্যান্য নানা প্রকার চায়ের মধ্যে চা প্রিয় মানুষের কাছে বিশেষ আকর্ষণ । দুধ ছাড়া এই লাল চা আপনি পুরো অসমসহ গুয়াহাটি রেল স্টেশনেও পেয়ে যাবেন ।
৬) কর্জাট স্টেশনের বিখ্যাত বড়া পাও:
মহারাষ্ট্র ঘুরে এলেন অথচ বড়া পাও খেলেন না এমনটা হতেই পারে না। ট্রেন সফরকালে , কর্জাট স্টেশনের এই মুচমুচে বড়া ও পাও আর সাথে চাটনি মন ভরিয়ে দেবার মতো একটা স্ন্যাক্সস হয়ে উঠতেই পারে ।
৭) হাওড়ার চিকেন কাটলেট:
মটন হোক, চিকেন হোক কিংবা মাছ – সারা কলকাতা শহর জুড়েই ‘কাটলেট’ একটা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে । এই কাটলেট বিশেষ করে চিকেন কাটলেটের কলকাতার আনাচ- কানাচ তো বটেই এমনকি হাওড়া স্টেশনেও বেশ রমরমিয়ে বিক্রি হয়।
৮) তুন্দলার বিখ্যাত আলু টিক্কি:
প্রত্যন্ত বলে হয়তো আপনি জায়গাটির নাম নাও শুনে থাকতে পারেন। তবে তুন্দলা ভোজন রসিকদের নিরাশ করে না। সারা ভারতবর্ষের বহু ভোজন রসিকই তুন্দলার আলু টিক্কির খ্যাতির কথা জানেন। মিষ্টি আর মশলাদার এই টিক্কির লোভেই অনেকে তুন্দলা থেকে ট্রেন ধরার পরিকল্পনা করে থাকেন।
খাবারের দিক থেকে রাজস্থানও যে পিছপা নয় চিতোরগড় স্টেশনের পকোড়া মুখে নিলেই তা আপনি বুঝতে পারবেন। তাই ভবিষ্যতে চিতোরগড়ের গেলে এক প্লেট মিক্স ভেজিটেবল পকোড়া চা সহযোগে আস্বাদন করতে ভুলবেন না যেন !
১০) মাদ্দুরের বিখ্যাত মাদ্দুর বড়া:
যদি আপনার সুদূর রেলভ্রমণের যাত্রাপথে মাদ্দুর স্টেশন চোখে পড়ে তাহলে অবশ্যই মাদ্দুরের বিখ্যাত বড়া খেতে অবশ্যই ভুলবেন না। কর্ণাটক রাজ্যের মান্দ্যা জেলার এই খাবারটি সান্ধ্যকালীন আহার অনায়াসেই হতে পারে। আপনাকে কষ্ট করে ট্রেন থেকে নীচেও নামতে হবে না। বিক্রেতারা নিজেরাই ট্রেনের ভিতরে উঠে এগুলো বিক্রি করে থাকেন।
১১) চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনের ঘি পিঁয়াজি রাভা ধোসা:
যদি কেউ মনে করেন দক্ষিণ ভারতের খাবারগুলো সব একই রকম একঘেঁয়ে তাহলে আপনার ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল । যেমন ধোসার কথাই ধরুন না, কত যে নানান স্বাদের ধোসা আছে ! ব্যাক্তিগত ভাবে আমার তো তামিলনাড়ুর ধোসা বেশ ভাল লাগে। চেন্নাই (মধ্য) রেলস্টেশনের খাদ্যবিক্রেতারা নানা রকমের ধোসা বিক্রি করে থাকেন তবে ঘি পিঁয়াজি রাভা ধোসা লা জবাব।
১২) চার্বাঘ স্টেশনের বিখ্যাত লাখনবি বিরিয়ানি:
খাবারের কথা এলেই লখনৌ-এর কথা না বললেই নয় | এখানকার বিখ্যাত টুন্ডে কাবাবই হোক কিংবা চটপটে চাট – লখনউ এর খাদ্যের খ্যাতির কথা প্রত্যেক ভোজনপ্রিয় মানুষ জানেন | বিশেষত চার্বাঘ স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চলটি কাবাব ও বিরিয়ানির জাতীয় খাদ্যের জন্য বিখ্যাত ।
১৩) খড়্গপুর রেলস্টেশনের আলুপুরি:
খড়্গপুরে বহু ছাত্রনিবাস থাকার কারণেই হয়তো এই স্টেশন চত্বরে বহু উপাদেয় খাবারই মেলে অত্যন্ত কম মূল্যে। এই ব্যস্ত স্টেশনে সারি দিয়ে বসে থাকেন বহু বিক্রেতা খাদ্যের পসরা সাজিয়ে । থাকে সবজি আলুর দম আর মুচমুচে পুরি। প্রাতঃরাশই হোক কিংবা দ্বিপ্রাহরিক আহার – এই আলুপুরি আপনাকে নিরাশ করবে না ।
১৪) জামশেদপুর বা টাটানগর স্টেশনের মাছের তরকারি:
আপনি যদি জামশেদপুরের উপর দিয়ে রেলপথে যেতে যেতে ভাবেন রেল ক্যান্টিনে খাওয়া দাওয়াটা সেরে নেবেন কিনা, তাহলে আমি বলব আর ভাববেন না। টাটানগর স্টেশন ক্যান্টিনটা কিন্তু অসাধারণ। ক্যান্টিনের পরিবেশটা সাদামাটা হলেও এখানকার স্থানীয় এলাকা থেকে ধরা টাটকা মাছের তরকারি আর সাধারণ সেদ্ধ চালের ভাত আপনার মুখে লেগে থাকবে।
১৫) মথুরা স্টেশনের প্যাঁড়া:
মথুরার প্যাঁড়ার কথা শোনেনি এমন লোক মেলা দুষ্কর। বিবিধ স্বাদের প্যাঁড়া মথুরার শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ । নামজাদা মিষ্টির দোকানের বিক্রেতারা বাক্সভর্তি প্যাঁড়া নিয়ে ট্রেনে ফেরি করে ফেরেন। তাদের থেকে একটা দুটো বাক্স ভর্তি প্যাড়া কেনাটা খুব একটা যুক্তিহীন হবে না|